শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত
অথৈ সাগরের ঢেউ ও সবুজ ঝাউবনে ঘেরা বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়ায় অবস্থিত এক দৃষ্টিনন্দন সৈকতের নাম শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত (Shuvo Sondha Sea Beach)। পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর মিলনস্থলের বৈচিত্র বাড়িয়ে তুলেছে প্রায় ৪ কিলোমিটার লম্বা বেলাভূমির শুভ সন্ধ্যা। সোনাকাটা ইকোপার্ক সংলগ্ন শুভ সন্ধ্যা মূলত নলবুনিয়া এলাকার একটি চর।
তালতলী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতের সাগর তীরের মুক্ত বাতাস এবং চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে। শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট টেংরাগিড়ির অংশ হওয়ায় সাগর পাড়ে সবুজের সমারোহের সাথে সাথে বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ চোখে পড়ে। সাগর তীরের বালুকণা পর্যটকদের দুই পায়ের অলঙ্কার হয়ে রয় যতদূর পা চলে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট টেংরাগিরি এই বেলাভূমির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে আসলে দেখা যাবে, সাগর পাড়ে সবুজের সমারোহে বন্যপ্রাণির অবাধ বিচরণ ও পাখির কুহুতান।
মৃদু ঢেউয়ের ভালোবাসা পায়ে লাগিয়ে, স্নিগ্ধ বাতাস গায়ে লাগিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে একেকটি গোধূলি সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখার মুহূর্তটা কোনো পর্যটকের পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রকৃতি প্রেমের এমন লোভে পড়ে গেলে এই স্বর্গে যেতে মন চাইবে বারবার। শুধু সমুদ্র ভ্রমণ কিংবা সৈকতের বালুময় সৈকত দর্শনার্থীর মন ভরাবে তা নয়। সমুদ্রের পাশাপাশি আরও অনেক কিছু দেখার সুযোগ মিলবে এখানে এলেই। শুভ সন্ধ্যার পাশেই আশার চরের অবস্থান। অসংখ্য মৎস্যজীবীর বসবাস এই চরে। আবার শীতের মৌসুমে পর্যটকরাও সেখানে যান।
দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, গভীর অরণ্য, বিশাল শুঁটকিপল্লী আছে আশার চরে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যাওয়া মানুষ শুঁটকি উৎপাদনের জন্য চরটিতে ঘর বাঁধে। বছরের ৭-৮ মাস থাকে শুঁটকি উৎপাদনের ব্যস্ততা। আশার চরের কাছেই আছে তালতলীর বিশাল রাখাইন পল্লী। বঙ্গোপসাগরের তীরে এ পল্লীতে কুপিবাতি জ্বালিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাঁতে কাপড় বোনার কাজ। তাঁতশিল্প ছাড়াও রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ মন্দিরও অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হতে পারে। আশার চরের শুঁটকি পল্লী, টেংরাগিড়ি ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, সোনাকাটা ইকোপার্কের হরিণসহ বন্যপ্রাণী ইত্যাদির দেখা পাবেন সেখানে। পাশাপাশি সেখানে দেখা মিলবে মৎসজীবীদের কর্মব্যস্ততা আর সৈকতের বুকে স্থানীয় শিশুদের উচ্ছ্বাস। এখানে নদী সমুদ্রের তাজা মাছ পাওয়া যায় ফকিরহাট বাজারের ছোট ছোট খাবারের হোটেলগুলোতে, যা পর্যটকদের পেট ভরাবে। এখানে খুব অল্প টাকায় খাওয়া যাবে মাছ ভাত বা গ্রামীণ স্থানীয় সব খাবার। এই সৈকতটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে নবীন বিবেচনায় খাবার ও মাছের দাম তুলনামূলক সস্তা।
বরগুনা জেলার প্রান্তিক জনপদের এই অনন্য সুন্দর সৈকতটি যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি। তবে জেলা শহর থেকে দূরে হওয়ায়, পরিবহন সংকট, প্রশাসনের নজরের বাইরে থাকা ও প্রচার প্রচারণার অভাবে বরগুনা সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পটগুলো নজরে আসছে না ভ্রমণপিপাসুদের। শুধু শুভ সন্ধ্যা সৈকতটি নয়, একইসঙ্গে পর্যটকরা এখানকার বেশ কিছু স্থান ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। বরগুনার ও নিকটবর্তী স্পটসমূহ- চর বিজয়, বঙ্গবন্ধু দ্বীপ, আশারচর, সোনাকাটা, টেংরাগিরি, শুভসন্ধ্যা সৈকত, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, লালদিয়ারচর, হরিণঘাটা সংরক্ষিত বনাঞ্চল, পদ্মার চর, সোনাতলা, মোহনা, চুলুর চর, ঐতিহাসিক বিবিচিনি শাহী মসজিদ, গাজীকালু ও চম্পাবতীর মাজার, জাহাজভাঙ্গা শিল্পাঞ্চল, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ প্রায় দুই ডজন পর্যটন স্পট এখন খুলে দিচ্ছে দেশের পর্যটন শিল্পের অমিয় সম্ভাবনার দ্বার।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক এবং নৌপথে বরগুনায় যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে দ্রুতি পরিবহন, সাকুরা পরিবহন, আবদুল্লাহ পরিবহন এবং আরো বেশকিছু বাস সার্ভিস এই পথে চলাচল করে। ভাড়া আনুমানিক ৪৫০-৫০০ টাকা (নন এসি)
আর ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে এম. ভি যুবরাজ – ২, এম ভি নুসরাত-২, এম. ভি. যুবরাজ – ৪ সহ আরো বেশকিছু ডাইরেক্ট এবং লোকাল লঞ্চ বিকেল ৫ টা হতে ৬ টার মধ্যে বরগুনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসব লঞ্চের ডেকের ভাড়া ২৫০ থেকে ৩৫০ এবং সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং ডাবল কেবিন ভাড়া ১২০০-১৪০০ টাকা।
বরগুনা থেকে তালতলী উপজেলা হয়ে বাস অথবা মটর সাইকেলে চড়ে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নে অবস্থিত সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতে যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন
বরগুনা শহরের আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউজের মধ্যে- জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজ, এল.জি.ই.ডি রেস্ট হাউস, পানি উন্নয়ন বোর্ড রেস্ট হাউজ, খামারবাড়ি রেস্ট হাউজ, গণপূর্ত বিভাগ, এ্যাগ্রো সার্ভিস সেন্টার (0448-62728), সি আর পি রেস্ট হাউজ (0448-62551), বরগুনা রেস্ট হাউজ (01718-588856), হোটেল তাজবিন (0448-62503), হোটেল আলম (0448-62234), হোটেল মৌমিতা (0448-62842), হোটেল ফাল্গুনী (0448-62733) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।